Saturday, April 25, 2020

ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা-৮ম-প্রথম অধ্যায়- আকাইদ


পরিচয়                                                          আকাইদ (*)

ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম মৌলিক কতিপয় বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়। যেমন- আল্লাহ তায়ালা, নবি-রাসুল, ফেরেশতা, আখিরাত ইত্যাদির উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। ইসলামের এরূপ মৌলিক বিষয়গুলাের উপর বিশ্বাসকে আকাইদ বলা হয় । আকাইদ শব্দটি বহুবচন। একবচনে আকিদাহ' যার অর্থ বিশ্বাস। আকাইদের বিষয়গুলাের প্রতি বিশ্বাস করতে হবে । এর কোনাে একটিকে অবিশ্বাস করলে কেউ মুসলিম হতে পারে না। অতএব, আকাইদ হলাে ইসলামের প্রধান ভিত্তি।
 এ অধ্যায় শেষে আমরা  

  • ইমানের পরিচয় ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ করতে পারব। ।
  • ইমানের প্রধান সাতটি বিষয় সম্পর্কে বর্ণনা করতে পারব।
  • ইসলামের মৌলিক বিষয়ের প্রতি অটল বিশ্বাস (ইমান) স্থাপন ও অনুশীলনে উদ্বুদ্ধ হব ।
  • নিফাকের (কপটতা) পরিচয় ও এর কুফল ব্যাখ্যা করতে পারব এবং নিফাক পরিহার করার উপায় বর্ণনা করতে পারব।
  • কপটতামূলক আচরণ পরিহার করে চলতে আগ্রহী হব। ।
  •  আল্লাহ তায়ালার কতিপয় গুণবাচক নামের অর্থ ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • মহান আল্লাহর গুণবাচক নামে বিধৃত গুণ নিজ আচরণে প্রতিফলন ঘটাবাে।
  • রিসালাতের অর্থ, নবি-রাসুলের সংখ্যা, নবি-রাসুলের পার্থক্য ও তাৎপর্য বর্ণনা করতে পারব।
  • নবুয়ত ও রিসালাতের পার্থক্য ব্যাখ্যা করতে পারব। খতমে নবুয়তের পরিচয়, তাৎপর্য ও প্রমাণ ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • আখিরাত ও কিয়ামত সম্পর্কে বর্ণনা করতে পারব। ।
  • শাফাআতের পরিচয় ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ করতে পারব। ।
  •  জান্নাতের পরিচয় ও তা লাভের উপায় বর্ণনা করতে পারব। ।
  •  জাহান্নামের পরিচয় ও স্বরূপ এবং জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় বর্ণনা করতে পারব।
  •  নৈতিক চরিত্র গঠনে ইমানের ভূমিকা বিশ্লেষণ করতে পারব।
                                                                            পাঠ ১
ইমান(*)
ইমান শব্দের অর্থ বিশ্বাস। ইসলামের মূল বিষয়গুলাের প্রতি বিশ্বাসকেই ইমান বলা হয়। প্রকৃত অর্থে আল্লাহ তায়ালা, নবি-রাসুল, ফেরেশতা, আখিরাত, তাকদির ইত্যাদি বিষয় মনে-প্রাণে বিশ্বাস করা ও মেনে নেয়াই হলাে ইমান । যে ব্যক্তি এসব বিষয়কে আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করেন তিনি হলেন মুমিন।
 ইমানের তিনটি দিক রয়েছে। এগুলাে হলাে-

ক. অন্তরে বিশ্বাস করা,

খ. মুখে স্বীকার করা এবং

গ. তদনুসারে আমল করা ।

অর্থাৎ ইসলামের যাবতীয় বিষয়ের প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি ও তদনুযায়ী আমল করার নাম হলাে ইমান। প্রকৃত মুমিন হওয়ার জন্য এ তিনটি বিষয় থাকা জরুরি। কেউ যদি শুধু অন্তরে বিশ্বাস করে, কিন্তু মুখে স্বীকার না করে তবে সে প্রকৃতপক্ষে ইমানদার বা মুমিন হিসেবে গণ্য হয় না। আবার মুখে স্বীকার করে অন্তরে বিশ্বাস না করলেও কোনাে ব্যক্তি ইমানদার হতে পারে না। বস্তুত আন্তরিক বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি ও তদনুযায়ী আমলের সমষ্টিই হলাে প্রকৃত ইমান ।

 ইমানের সাতটি বিষয়ের বিবরণ

ইমান বা বিশ্বাসের মৌলিক বিষয় মােট সাতটি। মুমিন হওয়ার জন্য এ সাতটি বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। আমরা পূর্বের শ্রেণিতে ইমানে মুফাস্সাল সম্পর্কে জেনেছি। তাতে ইমানের সাতটি বিষয়ের কথা উল্লেখ রয়েছে। এ পাঠে আমরা বিস্তারিতভাবে এ সাতটি বিষয় সম্পর্কে জানব।

 ১. আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস

ইমানের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান বিষয় হলাে আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস। আল্লাহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয়। তিনি আমাদের রব, মালিক, সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা, সাহায্যকারী, জন্ম ও মৃত্যুর মালিক। তিনি সকল গুণের আধার। তিনি পবিত্র, ক্ষমাশীল, দয়াবান, পরম দয়াময়, সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাবান, সর্বদ্রষ্টা ও সর্বশক্তিমান। তিনি কারাে মুখাপেক্ষী নন, তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।

আল্লাহ তায়ালা অনন্ত অসীম। তিনি সবসময় ছিলেন, আছেন ও থাকবেন। তাঁর সত্তা ও গুণাবলি অতুলনীয়। তিনি ঠিক তেমনই যেমনভাবে তিনি বিরাজমান। তাঁর অসংখ্য সুন্দর নাম রয়েছে । তার পিতা, পুত্র এবং স্ত্রী নেই। তিনিই একমাত্র সত্তা। তাঁর সমকক্ষ, সমতুল্য বা শরিক কেউ নেই । সমস্ত প্রশংসা ও ইবাদত একমাত্র তাঁরই প্রাপ্য। আল্লাহ তায়ালাকে তাঁর সত্তা, গুণাবলি ও সকল ৪ ক্ষমতাসহ বিশ্বাস করাই হলাে ইমানের সর্বপ্রধান বিষয়।

২. ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস

ফেরেশতাগণ নুরের তৈরি। আল্লাহ তায়ালা তাঁদের বিশেষ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। তারা সদাসর্বদা আল্লাহ তায়ালার জিকির ও তাসবিহ পাঠে রত । তারা আল্লাহ তায়ালার আদেশ অনুযায়ী বিভিন্ন কাজে নিয়ােজিত। ফেরেশতাগণ অদৃশ্য। তবে আল্লাহর আদেশে তারা বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করতে পারেন। তাঁরা পুরুষ নন আবার নারীও নন। তাঁদের আহার-দ্রিার প্রয়ােজন নেই। তাদের সংখ্যা অগণিত। একমাত্র আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত কেউই তাঁদের প্রকৃত সংখ্যা জানে না। ফেরেশতাগণের মধ্যে ৪ জন হলেন প্রসিদ্ধ। তাঁরা হলেন হযরত জিবরাইল (আ.), হযরত মিকাইল (আ.), হযরত আজরাইল (আ.) এবং হযরত ইসরাফিল (আ.)

৩. আসমানি কিতাবের প্রতি বিশ্বাস

মানবজাতির কল্যাণের জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবি-রাসুলগণের নিকট আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন। এগুলাে হলাে আল্লাহ তায়ালার পবিত্র বাণীসমষ্টি। এসব কিতাবে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় পরিচয় ও ক্ষমতার বর্ণনা প্রদান করেছেন। মানুষের জীবনযাপনের জন্য নানা আদেশ-নিষেধ প্রদান করেছেন। এ কিতাবগুলাে আসমানি কিতাব নামে পরিচিত। আল্লাহ তায়ালা নবি-রাসুলগণের মাধ্যমে এসব কিতাব আমাদের নিকট পৌছিয়েছেন ।

আসমানি কিতাব সর্বমােট একশত চার (১০৪) খানা । তন্মধ্যে ১০০ খানা ছােট। এগুলােকে বলা হয় সহিফা। আর বাকি ৪ খানা বড়। এগুলাে হলাে- তাওরাত, যাবুর, ইনজিল ও কুরআন। আল কুরআন হলাে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানি কিতাব । এতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল বিষয় সন্নিবেশিত রয়েছে। এটি মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ তথা পরিপূর্ণ জীবন বিধান।

 ৪. নবি-রাসুলগণের প্রতি বিশ্বাস 

মানবজাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে বহু নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন। তারা মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করতেন। তাঁরা সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় শিক্ষা দিতেন। কোন পথে চললে মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভ করবে তা দেখিয়ে দিতেন। নবি-রাসুলগণ ছিলেন মানবজাতির মহান শিক্ষক। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে বিশেষভাবে মনােনীত করেছেন। তাঁরা ছিলেন নিস্পাপ। সৃষ্টিকুলের মধ্যে তাঁদের সম্মান ও মর্যাদা সর্বাধিক। সর্বপ্রথম নবি ছিলেন হযরত আদম (আ.)। আর সর্বশেষ নবি ও রাসুল হলেন হযরত মুহাম্মদ (স.)। তিনি সাইয়্যেদুল মুরসালিন বা রাসুলগণের সর্দার । তিনি আমাদের নবি, ইসলামের নবি। আমরা তাঁরই উম্মত।

৫. আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস

আখিরাত হলাে পরকাল । দুনিয়ার জীবনের পর মানুষের আরও একটি জীবন রয়েছে। এ জীবন  স্থায়ী ও অনন্তকাল ব্যাপী। এটাই হলাে পরকাল । আখিরাত বা পরকালের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। ৪ কিয়ামত, কবর, হাশর, মিযান, সিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি আখিরাত জীবনের একেকটি স্তর।

আখিরাত হলাে কর্মফল ভােগের স্থান। মানুষ দুনিয়ার জীবনে যেমন কাজ করবে আখিরাতে তেমন ফল ভােগ করবে। ভালাে কাজ করলে আখিরাতে পুরস্কার পাবে। তার স্থান হবে জান্নাতে । আর যে খারাপ কাজ করবে সে শাস্তি ভােগ করবে। তার ঠিকানা হবে জাহান্নামে।

 ৬. তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস

তাকদির অর্থ ভাগ্য। তাকদির আল্লাহ তায়ালা থেকে নির্ধারিত। ভালাে-মন্দ যা কিছু হয় সবই আল্লাহ তায়ালার হুকুমে হয়। সুতরাং দুনিয়াতে ভালাে কিছু লাভ করলে আনন্দে আত্মহারা হওয়া যাবে না। বরং এটি আল্লাহরই দান। তাই আল্লাহ তায়ালার শুকুর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। অন্যদিকে বিপদে-আপদে বা কোনাে ক্ষতির সম্মুখীন হলে হতাশ হওয়া যাবে না। এর জন্য অন্যায় ও দুর্নীতি করা যাবে না। বরং এটিও আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকেই এসেছে। সুতরাং এ অবস্থায় সবর বা ধৈর্যধারণ করতে হবে। আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইতে হবে । অতএব, আমরা তাকদিরে বিশ্বাস করব এবং সাধ্যমতাে নেক কাজ করব।

৭. মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস

মৃত্যুর পর আমাদের পুনরায় জীবিত করা হবে। দুনিয়ার প্রথম মানব হযরত আদম (আ.) থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আসবে সকলকেই আল্লাহ তায়ালা জীবিত করবেন। একেই বলা হয় পুনরুত্থান। এ সময় সবাই হাশরের ময়দানে সমবেত হবে। আল্লাহ তায়ালা সেদিন প্রত্যেকের নিকট নিজ নিজ আমলের হিসাব চাইবেন। আমাদের সেদিন তাঁর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা সেখানে পাপ-পুণ্যের ওজন করবেন, হিসাব নেবেন। তিনিই হবেন একমাত্র বিচারক। অতঃপর ভালাে কাজের পুরস্কার ও মন্দ কাজের জন্য শাস্তি দেওয়া হবে ।

উল্লিখিত সাতটি বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস করা অপরিহার্য। এগুলাের প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি ও তদনুযায়ী আমল করলে আমরা প্রকৃত মুমিন হতে পারব।

 ইমান আনার শুভ পরিণাম

ইমান আল্লাহর একটি বড় নিয়ামত। ইমানের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভ করতে পারে। মুমিন ব্যক্তি দুনিয়াতে শ্রদ্ধা, সম্মান, কল্যাণ ও সাফল্য লাভ করেন। সকলেই তাঁকে ভালােবাসে । আল্লাহ তায়ালা বলেন

                                                         


অর্থ: “আর সম্মান তাে কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং মুমিনদের জন্যই।” (সূরা আল-মুনাফিকুন, আয়াত ৮) মুমিন ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রিয়পাত্র । আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের ভালােবাসেন। আখিরাতে তিনি মুমিনদের চিরশান্তির জান্নাত দান করবেন। মুমিনগণ সেখানে চিরকাল থাকবেন। জান্নাতের সকল নিয়ামত ভােগ করবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন


অর্থ : “নিশ্চয়ই যারা ইমান আনে ও সঙ্কর্ম করে তাঁদের আপ্যায়নের জন্য রয়েছে ফিরদাউস জান্নাত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।” (সূরা আল-কাহফ, আয়াত ১০৭-১০৮)

আমরা ইমানের প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে ভালােভাবে পড়ব। এ সম্পর্কে জানব এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করব। অতঃপর এগুলাের অনুসরণ করে নিজ জীবন গড়ে তুলব। আমরা সবসময় নেক কাজ করব। কখনাে অন্যায় ও অত্যাচার করব না। এভাবে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি ও সফলতা লাভ করতে সক্ষম হব।

কাজ : শিক্ষার্থীরা

ক. ইমানের সাতটি বিষয় লিখে একটি পােস্টার তৈরি করে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করবে।
খ. ইমানের সাতটি বিষয়ের বিবরণ বাড়ি থেকে খাতায় লিখে এনে শিক্ষককে দেখাবে।
             গ. দলে বিভক্ত হয়ে ইমান আনার কী কী শুভ পরিণাম রয়েছে তার একটি তালিকা তৈরি করে
                            শ্রেণিতে উপস্থাপন রকবে।


পাঠ২ 
নিফাক (*)
 পরিচয় 
নিফাক শব্দের অর্থ ভণ্ডামি, কপটতা, প্রতারণা, দ্বিমুখী নীতি ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় মুখে ইমানের স্বীকার ও অন্তরে অবিশ্বাস করাকে নিফাক বলা হয়। যে ব্যক্তি এরূপ করে তাকে বলা হয় মুনাফিক। মুনাফিকরা সাধারণত সামাজিক ও পার্থিব লাভের জন্য এরূপ করে থাকে। তারা মুসলমান ও কাফির উভয় দলের সাথেই থাকে। প্রকাশ্যে তারা নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করে। কিন্তু গােপনে তারা ইসলামকে অস্বীকার করে। তাদের অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন

অর্থ: “যখন তারা (মুনাফিকরা) ইমানদারদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে আমরা ইমান এনেছি। আর যখন তারা গােপনে তাদের শয়তানদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তাে তােমাদের সাথেই আছি। আমরা শুধু তাদের সাথে ঠাট্টা-তামাশা করে থাকি।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৪)। এক কথায় অন্তরে কুফর রেখে মুখে মুখে ইমানের কথা প্রকাশকে নিফাক বলে। আর এরূপ প্রকাশকারী হলাে মুনাফিক।

মুনাফিকদের চরিত্র

 নিফাক হলাে নৈতিকতা ও মানবিকতার আদর্শের বিপরীত কাজ। মুনাফিকদের চরিত্র দেখলে আমরা এ সত্য ৪   জানতে পাই। তারা সব ধরনের অন্যায় ও মন্দ কাজ করে থাকে। উত্তম আচরণ ও উত্তম চরিত্র তারা কখনােই
 অনুশীলন করে না। বরং মিথ্যা ও প্রতারণাই তাদের প্রধান কাজ। আল্লাহ পাক বলেন-


অর্থ : “মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি। যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং যখন তার নিকট কোনাে কিছু গচ্ছিত রাখা হয় তখন তার খিয়ানত করে।” (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)


নিফাকের কুফল ও পরিণতি
নিফাক জঘন্যতম পাপ । এটা মানুষের চরিত্র ধ্বংস করে ফেলে। নিফাকের ফলে মানুষ অন্যায় ও অশ্লীল কাজে অভ্যস্ত হয়ে যায়। ফলে মানুষের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবােধ বিনষ্ট হয়। নিফাকের দ্বারা মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস ও সন্দেহের সৃষ্টি হয়। ফলে মানব সমাজে মারামারি, হানাহানি ও অশান্তির সৃষ্টি হয়। মুনাফিকরা ইসলামের চরম শত্রু । এরা বাইরে মুসলমান বলে দাবি করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরা কাফিরদের পক্ষে কাজ করে। এদের গােপন শত্রুতা মুসলমানদের বিপদে ফেলে। এ শত্রুরা গুপ্তচর হিসেবে কাজ করে । ইসলাম ও মুসলমানদের গােপন কথা ও দুর্বলতা প্রকাশ করে দেয়। এরা মুসলমানদের মধ্যে মতানৈক্য ও মারামারি সৃষ্টির চেষ্টা করে। প্রকাশ্য শত্রুর তুলনায় গােপন শত্রু বেশি ক্ষতিকর। কেননা প্রকাশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করা যায়। কিন্তু যে গােপনে শত্রুতা করে তাকে চেনা যায় না। তার ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য আত্মরক্ষা করারও সুযােগ পাওয়া যায় না। ফলে সে বন্ধু বেশে সহজেই বড় ক্ষতিসাধন করতে পারে। এসব কারণে দুনিয়াতে মুনাফিকরা ঘৃণিত ও নিন্দিত হয় । আখিরাতেও তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের কঠোর আযাব । আল্লাহ তায়ালা বলেন

অর্থ : “নিশ্চয়ই মুনাফিকদের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত ১৪৫) আমরা সকলেই নিফাক থেকে বেঁচে থাকব। হাদিসে যেসব কাজ মুনাফিকের নিদর্শন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে আমরা সেগুলাে বর্জন করব । খাঁটি মুমিন হিসেবে জীবনযাপনের চেষ্টা করব।


 নিফাক পরিহারের উপায়
 ১. কথা বলার সময় সত্য কথা বলবে, মিথ্যা কথা বলবে না।
 ২. কাউকে কথা দিলে তা রক্ষা করবে।
 ৩. আমানত রক্ষা করবে। যেমন কারাে কাছে কোনাে জিনিস ও সম্পদ আমানত রাখলে তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ
 করবে এবং ফেরত দিবে। কারাে সাথে কথা দিলে তা রক্ষা করবে। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করবে না।



কাজ : শিক্ষার্থীরা-

 ক. দলে বিভক্ত হয়ে মুনাফিকের নিদর্শনগুলাে লিখে একটি পােস্টার তৈরি করে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।
 খ. নিফাকের কুফল ও পরিণতি সম্পর্কে ১০টি বাক্য লিখে শিক্ষককে দেখাবে।



পাঠ ৩
 আল-আসমাউল হুসনা (*)

আল-আসমাউল হুসনা শব্দ দ্বয়ের অর্থ সুন্দরতম নামসমূহ। ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নামসমূহকে একত্রে আসমাউল হুসনা বলা হয়। আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালার এরূপ বহু গুণবাচক নাম। উল্লেখ করা হয়েছে । হাদিস শরিফে আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি গুণবাচক নামের কথা বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নাম অসংখ্য । তন্মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও বিখ্যাত হলাে ৯৯টি নাম। যেমনআলিম, খাবির, রাযাক, গাফ্ফার, রাহীম, রাহমান ইত্যাদি।


গুরুত্ব ও তাৎপর্য
আল-আসমাউল হুসনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। এ নামগুলাে তার পরিচয় ও ক্ষমতার প্রকাশ ঘটায় । এ নামগুলাের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার গুণ ও বৈশিষ্ট্য জানতে পারি। ফলে তাঁর আদেশ-নিষেধ পালন করতে সহজ হয়। এ নামগুলাের দ্বারা আমরা আল্লাহ তায়ালাকে ডাকতে পারি । এসব নামে ডাকলে তিনি খুশি হন। এসব নাম ধরে আমরা মােনাজাত করতে পারি । তিনি স্বয়ং বলেছেন

অর্থ : “আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দর নামসমূহ। সুতরাং তােমরা তাঁকে সে সকল নাম দ্বারাই ডাকো। যারা তার নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করাে। অচিরেই তাদের কৃতকর্মের ফল প্রদান করা হবে।” (সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত ১৮০)আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নামসমূহ আমাদের উত্তম চরিত্রবান হতে অনুপ্রাণিত করে। আল্লাহ তায়ালার এসব গুণ অর্জনের জন্য মানুষ তার জীবনে চর্চা করলে সে সচ্চরিত্রবান হয়। সমাজে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবােধ প্রতিষ্ঠিত হয়। আল কুরআনে বলা হয়েছে-



                                                  
অর্থ : (আমরা গ্রহণ করলাম) “আল্লাহর রং, আর রঙে আল্লাহ অপেক্ষা আর কে অধিকতর সুন্দর?” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৩৮) আল্লাহর রং হলাে আল্লাহর দীন ও তাঁর গুণাবলি। আর সর্বোত্তম গুণাবলিতাে আল্লাহরই। সুতরাং আল্লাহর গুণাবলির অনুসরণ করলে উত্তম চরিত্রবান হওয়া সম্ভব। নিম্নেবর্ণিত আলােচনায় আমরা আল্লাহ তায়ালার কতিপয় গুণের সাথে পরিচিত হব।



আল্লাহু গাফফারুন (*)
গাফ্ফার শব্দের অর্থ অতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ্ গাফ্ফারুন অর্থ আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ তায়ালার

ক্ষমা অপরিসীম। তিনি সবচেয়ে বড় ক্ষমাশীল। তিনি বলেন-

অর্থ : “এবং আমি অবশ্যই অতি ক্ষমাশীল তার প্রতি যে তাওবা করে, ইমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচল থাকে।” (সূরা তা-হা, আয়াত ৮২)


আল্লাহু সামাদুন (*)

সামাদুন শব্দের অর্থ অমুখাপেক্ষী। আল্লাহু সামাদুন অর্থ আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। আল্লাহ তায়ালা কারাে মুখাপেক্ষী নন। তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ। আল কুরআনে তিনি নিজেই বলেছেন- (*) অর্থ: “আল্লাহ অমুখাপেক্ষী।” (সূরা আল-ইখলাস, আয়াত ০২)।

আল্লাহ তায়ালা খালিক বা সৃষ্টিকর্তা। তিনি ব্যতীত সবকিছুই মাখলুক বা সৃষ্টি। সকল সৃষ্টিই তাঁর মুখাপেক্ষী। জন্ম-মৃত্যু, বেড়ে ওঠা সবকিছুর জন্য সকল সৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার কুদরতের মুখাপেক্ষী। তিনি কারাে মুখাপেক্ষী নন। তিনি সকল প্রয়ােজন ও চাহিদার উর্ধ্বে। সব প্রকার লাভ-লােকসান, ক্ষয়-ক্ষতি, দোষত্রুটি থেকে তিনি মুক্ত বা পবিত্র বিশ্বজগৎ সৃষ্টিতে তাঁর কোনাে সাহায্যকারীর প্রয়ােজন হয় নি। সৃষ্টিজগৎ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও তাঁর কোনাে সাহায্যকারীর দরকার নেই। বড় বড় সাগর-মহাসাগর, পাহাড়-পর্বত তাঁর এক হুকুমেই তৈরি হয়ে যায়। জটিল জটিল সৃষ্টিও তাঁর হও’ বলার সাথে সাথে অস্তিত্ব লাভ করে। সুতরাং তিনি সাহায্যকারী ব্যতীতই মহান স্রষ্টা।

তার কোনাে কিছুরই প্রয়ােজন নেই। এমনকি ইবাদত-বন্দেগি ও প্রশংসারও তিনি মুখাপেক্ষী নন। মানুষের নিজের কল্যাণের জন্যই ইবাদত-বন্দেগি করা প্রয়ােজন। তিনি খাদ্য-পানীয়, নিদ্রা, বিশ্রাম ইত্যাদির উর্ধ্বে। এক কথায় তিনি স্বয়ং সম্পূর্ণ ও অমুখাপেক্ষী একমাত্র সত্তা ।

আমরা আল্লাহ তায়ালার এ গুণ উপলব্ধি করব। নিজে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করব। পরমুখাপেক্ষিতা বর্জন করব। আল্লাহ ব্যতীত আর কারাে নিকট সাহায্য চাইব না ।

আল্লাহু রাউফুন (*)
রাউফুন শব্দের অর্থ অতিশয় দয়াবান, পরম দয়ালু, অতি স্নেহশীল। আল্লাহু রাউফুন অর্থ- আল্লাহ অতি দয়াবান, অত্যন্ত স্নেহশীল । আল্লাহ তায়ালার দয়া ও করুণার শেষ নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৪৩)

আমাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার দয়া ও করুণার শেষ নেই। তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। এরপর তিনি দয়া ও স্নেহের মাধ্যমে আমাদের প্রতিপালন করেন। তিনি মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে মায়াভালােবাসা সঞ্চার করে দেন। তাঁরা আমাদের সেবা দিয়ে বড় করেন। আমরা নাফরমানি করলেও তিনি দুনিয়াতে আমাদের তৎক্ষণাৎ শাস্তি দেন না। বরং করুণাবশত আমাদের সুযােগ দেন। আমরা তাওবা করলে তিনি দয়া করে আমাদের ক্ষমা করেন আমাদের রহমত ও বরকত দান করেন।দুনিয়া ও আখিরাতের সব কল্যাণই তাঁর দান ।তিনি করুণা ও দয়ার আধার।

আমরাও আল্লাহ তায়ালার এ গুণের চর্চা করব। পরস্পরের প্রতি আমরা দয়াশীল হব । কাউকে আঘাত করব। বরং স্নেহ, মায়া, মমতা ও ভালােবাসা দিয়ে সবাইকে আপন করে নেব।



 আল্লাহু হাসিবুন ( *)
হাসিবুন অর্থ হিসাব গ্রহণকারী । আল্লাহু হাসিবুন অর্থ আল্লাহ হিসাব গ্রহণকারী । আল্লাহ তায়ালা বলেন-

অর্থ : “নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত ৮৬)

আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন মানুষের সকল কৃতকর্মের হিসাব নেবেন। হাশরের ময়দানে তিনিই হবেন একমাত্র বিচারক। আল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-
                                                                     
অর্থ : “তিনি (আল্লাহ) বিচার দিনের মালিক।” (সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত ৩) সেদিন তিনি সব মানুষের হাতে আমলনামা প্রদান করবেন। আমলনামায় প্রত্যেকের সব কাজের হিসাব লেখা থাকবে। ছােট-বড়, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, গােপনে-প্রকাশ্যে কৃত সবধরনের কাজেরই সেদিন হিসাব নেওয়া হবে । আল্লাহ তায়ালা বলেন-


অর্থ : “যদি তােমরা মনের কথা প্রকাশ কর কিংবা গােপন রাখ, আল্লাহ তােমাদের কাছ থেকে তারও হিসাব নেবেন।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৮৪)

সবাইকেই সেদিন আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। পাপ পুণ্যের হিসাব না দিয়ে সেদিন কেউই রেহাই পাবে না আল্লাহ তায়ালা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সবারই হিসাব নেবেন। এজন্যই তিনি হাসিব বা সূক্ষ্ম হিসাব গ্রহণকারী। আমরা      আল্লাহ তায়ালার এ গুণটির তাৎপর্য বুঝব । তারপর নিজেই নিজ আমলের হিসাব রাখব। প্রতিদিন রাতে ঐ দিনের      পাপ-পুণ্যের হিসাব করব। অতঃপর পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব এবং ভবিষ্যতে পাপ আর না করতে চেষ্টা করব।

আল্লাহু মুহাইমিনুন (*)

মুহাইমিনুন শব্দের অর্থ নিরাপত্তাদানকারী, রক্ষণাবেক্ষণকারী, আশ্রয়দাতা। আল্লাহু মুহাইমিনুন অর্থ আল্লাহ আশ্রয়দাতা। আল্লাহ তায়ালা হলেন প্রকৃত রক্ষাকর্তা। তিনিই একমাত্র এবং সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। আল্লাহ তায়ালাই আমাদের রক্ষক। তিনি আমাদের বিপদাপদ থেকে রক্ষা করেন। শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে তিনিই হেফাজত করেন । হিংসুক, জাদুকর, ষড়যন্ত্রকারী, সকলের অনিষ্ট থেকে রক্ষাকারী একমাত্র তিনিই। তাঁর সুরক্ষাই প্রকৃত সুরক্ষা। কেউ তার সুরক্ষা ভেদ করতে পারে না। তিনি যাকে রক্ষা করেন কেউ তার কোনাে অনিষ্ট করতে পারে না। সবসময় সকল বিপদে তাঁরই আশ্রয় চাইতে হবে। আল কুরআন ও হাদিসের বহুস্থানে আমাদের এ শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। আমাদের প্রিয়নবি (স.) তাঁর নিকটই আশ্রয় প্রার্থনা করতে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন ।

আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করব। তিনি আমাদের রক্ষা করবেন। আমরা বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করব, আশ্রয় দেব। ফলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর খুশি হবেন ।



কাজ : শিক্ষার্থীরা মহান আল্লাহর ১৫টি গুণবাচক নাম অর্থসহ লিখে একটি তালিকা প্রস্তুত করে
শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন রবেক ।


পাঠ ৪
রিসালাত (*) 

আকাইদের বিষয়সমূহের মধ্যে রিসালাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাওহিদের পরই আসে রিসালাত । রিসালাত অর্থ সংবাদ বহন, খবর বা চিঠি পৌছানাে। ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার বাণী, আদেশনিষেধ মানুষের নিকট পৌঁছানােকে রিসালাত বলে। যাঁরা এ সংবাদ পৌঁছানাের কাজ করেন তাঁরা হলেন ও নবি-রাসুল । রিসালাত ও নবি-রাসুলের উপর বিশ্বাস করা ফরজ বা আবশ্যক।

নবি-রাসুলের সংখ্যা 
আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির হিদায়াতের জন্য বহু নবি-রাসুল এ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। পৃথিবীতে এমন কোনাে জাতি ছিল না যেখানে আল্লাহ তায়ালা নবি-রাসুল প্রেরণ করেন নি। আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-


                                           
অর্থ : “আর প্রত্যেক জাতির জন্য পথপ্রদর্শক রয়েছে।” (সূরা আর-রা'দ, আয়াত ৭) কুরআন মজিদে আমরা মাত্র ২৫ জন নবি-রাসুলের নাম দেখতে পাই । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাদের সংখ্যা ছিল লক্ষাধিক। একটি হাদিসে হযরত আবুজর গিফারি (রা.) বলেন, “একবার আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! নবিগণের সংখ্যা কত? উত্তরে মহানবি (স.) বললেন, এক লক্ষ চব্বিশ হাজার । তন্মধ্যে তিন শত তেরাে জন অপর বর্ণনা মতে তিন শত পনেরাে জন হলেন রাসুল।” (মিশকাত)

আরেক বর্ণনা মতে নবিগণের সংখ্যা হলাে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার। এঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম নবি ছিলেন হযরত আদম (আ.), আর সর্বশেষ নবি ও রাসুল হলেন আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.)।


নবি-রাসুলের পার্থক্য
অর্থগত দিক থেকে এ দুটি শব্দের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা যাদের প্রতি আসমানি কিতাব নাজিলকরেছেন কিংবা নতুন শরিয়ত প্রদান করেছেন, তাঁরা হলেন রাসুল। আর যার প্রতি কোনাে কিতাব অবতীর্ণ হয় নি কিংবা যাঁকে কোনাে নতুন শরিয়ত দেওয়া হয় নি তিনি হলেন নবি। তিনি তাঁর পূর্ববর্তী রাসুলের শরিয়ত প্রচার করতেন। এ হিসেবে সকল রাসুলই নবি ছিলেন। কিন্তু সকল নবি রাসুল ছিলেন না। যেমন- আমাদের মহানবি (স.) ছিলেন একাধারে নবি ও রাসুল। হযরত নূহ (আ.) এর উপরে কোন কিতাব নাজিল হয় নি কিন্তু তার দ্বারা শরিয়তের বিধি-বিধান প্রচার ও প্রবর্তন হয়েছে। তিনিও রাসুল ছিলেন। অপরদিকে হযরত হারুন (আ.) ছিলেন মাত্র নবি। তাঁর প্রতি কোনাে কিতাব নাজিল হয় নি। তিনি হযরত মুসা (আ.)-এর শরিয়ত প্রচার করতেন।


রিসালাতের তাৎপর্য
নবি-রাসুলগণ ছিলেন মানুষের প্রতি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নিয়ামত স্বরূপ। তাঁরা সকলকে তাওহিদের পথে ডাকতেন। কুফর, শিরক, নিফাক থেকে সতর্ক করতেন। উত্তম চরিত্র ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করতেন। নবিগণের দাওয়াতের মূল কথা আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর বিধি-বিধান প্রচার করা। এ সম্পর্কে আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,

অর্থ : “হে আমার সম্প্রদায়! তােমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত তােমাদের কোনাে ইলাহ নেই।” (সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত ৭৩)

নবি-রাসুলগণের দায়িত্বকেই বলা হয় রিসালাত। এ রিসালাতের মর্ম বর্ণনা করে মহান আল্লাহ বলেন-

অর্থ: “আল্লাহর ইবাদত করার ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেয়ার জন্য আমি তাে প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসুল পাঠিয়েছি।” (সূরা আন-নাহল, আয়াত ৩৬)

নবি রাসুলগণ আল্লাহ তায়ালার দেওয়া এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন। যারা তাদের আনুগত্য ও অনুসরণ করেছে তারা সফলকাম হয়েছে। আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রিয়নবি (স.) এর আনীত বিধান অনুসরণ করব, তাহলে আমরাও সফলকাম হব ।



কাজ : শিক্ষার্থীরা রিসালাত পাঠটি নীরবে পড়বে অতঃপর রিসালাতের মর্ম সম্পর্কে পাঁচটি বাক্য লিখে | শিক্ষককে দেখাবে।

পাঠ ৫
খতমে নবুয়ত (*)
পরিচয়
খতম শব্দের অর্থ শেষ, সমাপ্ত। আর নবুয়ত অর্থ পয়গম্বারি, নবিগণের দায়িত্ব ইত্যাদি। সুতরাং খতমে নবুয়ত অর্থ নবিগণের দায়িত্বের পরিসমাপ্তি বা নবুয়তের সমাপ্তি। মানবজাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে বহু নবি-রাসুল প্রেরণ করেন। এ ক্রমধারা শুরু হয় হযরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে, আর হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর       আগমনের মাধ্যমে শেষ হয়। নবুয়ত তথা নবি-রাসুল আগমনের এ ক্রমধারাটির সমাপ্তিকেই খতমে নবুয়ত বলা হয় ।
যার মাধ্যমে এ ক্রমধারা শেষ হয় তিনি হলেন খাতামুন নাবিয়্যিন বা নবিগণের শেষজন। আর তিনি হলেন মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)।


তাৎপর্য
আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবি। তিনি হলেন খাতামুন নাবিয়্যিন। তার পর আজ পর্যন্ত কোনাে নবি আসেন নি আর কিয়ামত পর্যন্ত আসবেনও না। তার মাধ্যমে নবি-রাসুলের আগমনের ধারা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খতমে নবুয়তের উপর বিশ্বাস করা অপরিহার্য। এতে বিশ্বাস না
করলে মানুষ ইমানদার হতে পারে না।

খতমে নবুয়তেরপ্রমাণ
মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন সর্বশেষ নবি। তাঁর মাধ্যমে নবুয়তের ক্রমধারা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে।    কুরআন-হাদিসের বহু স্থানে এ বিষয়টি স্পষ্ট করে বর্ণনা করা হয়েছে । নিমে আমরা খতমে নবুয়ত এর কিছু প্রমাণ স্পষ্টভাবে জানব ।


আল কুরআনের দলিল
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি মহানবি (স.)-কে খাতামুন নাবিয়্যিন বলেছেন। মহান আল্লাহ বলেন-

অর্থ : “মুহাম্মদ তােমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন। বরং তিনি তাে আল্লাহর রাসুল ও সর্বশেষ নবি ।” (সূরা আল-আহযাব, আয়াত ৪০)

হাদিস শরিফের দলিল
বহু হাদিসে খতমে নবুয়তের প্রমাণ রয়েছে। নিমে আমরা এ সম্পর্কে কতিপয় হাদিস জানব
১. মহানবি (স.) বলেন-   

অর্থ: “আমিই শেষ নবি । আমার পর আর কোনাে নবি আসবেন না।” (সহিহ মুসলিম)


২. রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন-“রিসালাত ও নবুয়তের ধারা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমার পর আর কোনাে
    নবি ও রাসুল আসবেন না।” (জামি তিরমিযি)

৩. নবি করিম (স.) বলেন- “বনি ইসরাইলে নবিগণই নেতৃত্ব দিতেন। যখনই কোনাে নবি
     ইন্তিকাল করতেন তখনই পরবর্তী নবি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতেন। কিন্তু আমার পর আর কোনাে নবি আসবেন না।”
     (সহিহ বুখারি)

৪. একটি হাদিসে মহানবি (স.) উপমার মাধ্যমে খতমে নবুয়ত ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন,
   “আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবিগণের দৃষ্টান্ত হলাে এরূপ যে, এক লােক একটি দালান নির্মাণ করল । খুব সুন্দর ও      
    লােভনীয় করে তা সজ্জিত করল। কিন্তু তার এক কোণে একটি ইটের স্থান ফাঁকা ছিল। লােকজন দালানটির      
    চারদিকে ঘুরে এর সৌন্দর্য দেখছিল আর বিস্ময় প্রকাশ করছিল এবং বলছিল- “এ কোণে একটি ইট রাখা হয় নি     
    কেন? বস্তুত আমিই সে ইট এবং আমি শেষ নবি ।” (সহিহ বুখারি)

পুরাে দালানে একটি ইট লাগানাে বাকি ছিল। ইট লাগাতেই সে দালান পরিপূর্ণ হয়ে গেল । নবুয়তও তেমনি একটি দালানের সদৃশ। সেই দালানের সর্বশেষ ইট মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)। তাঁর মাধ্যমেই দালানের সর্বশেষ ইট লাগানাে হয়। পরিপূর্ণ হয়ে গেল নির্মাণকাজ। ফলে নতুন করে দালানের আর কোথাও ইট লাগানাের প্রয়ােজন পড়বে না। অর্থাৎ নবি আসারও দরকার পড়বে না।


যৌক্তিক প্রমাণ
যুক্তির মাধ্যমেও আমরা খতমে নবুয়তের প্রমাণ লাভ করতে পারি। যেমন- যুক্তির আলােকে দেখা যায় এক নবির পর অন্য নবি সাধারণত তিনটি কারণে আসতেন। যথা-

ক. পূর্ববর্তী নবির শিক্ষা বিলুপ্ত বা বিকৃত হয়ে গেলে ;

খ. পূর্ববর্তী নবির শিক্ষা অসম্পূর্ণ হয়ে পড়লে কিংবা তাতে নতুন কিছু সংযােজন-বিয়ােজনের প্রয়ােজন হলে;

গ. পূর্ববর্তী নবির শিক্ষা কোনাে বিশেষ স্থান বা কালের জন্য নির্দিষ্ট হলে।



উপরিউক্ত কারণগুলাের কোনােটিই বর্তমানকালে প্রযােজ্য নয়। কেননা-

১. হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর শিক্ষা ও আদর্শ আজ পর্যন্ত বিদ্যমান। এটি বিন্দুমাত্র বিলুপ্ত বা বিকৃত হয় নি।
    সুতরাং নতুন কোনাে নবি আসার প্রয়ােজন নেই ।

২. রাসুল (স.)-এর শিক্ষা এবং দীন ইসলাম পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ । এতে কোনাে অসম্পূর্ণতা নেই। এতে
   কোনােরূপ সংযােজন ও বিয়ােজনেরও প্রয়ােজন নেই। আল্লাহ তায়ালাই বলেছেন-



অর্থ : “আজ আমি তােমাদের জন্য তােমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তােমাদের উপর আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তােমাদের দীন হিসেবে মনােনীত করলাম।” (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ৩)

৩. নবি করিম (স.) কোনাে বিশেষ স্থান বা কালের জন্য আসেন নি। বরং তিনি সর্বকালের সকলের নবি ।
     কিয়ামত পর্যন্ত সকল স্থানের মানুষের নবি । আল্লাহ তায়ালা বলেন-

অর্থ: “আমি তাে আপনাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি।” (সূরা সাবা, আয়াত ২৮)



অর্থ : “বলুন, হে মানুষ! আমি তােমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রাসুল।” (সূরা আল-আরাফ, আয়াত ১৫৮) নবি আগমনের তিনটি কারণের একটিও বর্তমানে প্রযােজ্য নয়। সুতরাং নতুন কোনাে নবি আগমনেরও প্রয়ােজন নেই। আমাদের নবিই শেষ নবি । তিনিই খাতামুন নাবিয়্যিন ।


কাজ : শিক্ষার্থীরা খতমে নবুয়ত পাঠটি নীরবে পড়বে। শ্রেণির সকলে মিলে তিনজন বক্তা নির্বাচন করবে। এবার তিনজনের একজন খতমে নবুয়তের উপর কুরআনের দলিল, আরেকজন হাদিস শরিফের দলিল এবং অন্যজন যৌক্তিক প্রমাণ উপস্থাপন করে বক্তব্য রাখবে। তাদের বক্তব্য শ্রেণির সকলে মনােযােগ দিয়ে শুনবে। শিক্ষক মহােদয় সভাপতি ও সমন্বয়ক হিসেবে এ কাজে সহযােগিতা করবেন। সকলে অনুষ্ঠান শেষে বক্তাদের ধন্যবাদ জানাবে।



পাঠ ৬
আখিরাত (*)

আখিরাত হলাে মৃত্যুর পরবর্তী জীবন । বাংলা ভাষায় একে পরকাল বলা হয়। ইসলামি পরিভাষায় মৃত্যুর সাথে সাথে মানুষের যে নতুন জীবন শুরু হয় তা-ই পরকাল বা আখিরাত। এ জীবনের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই । এটি অনন্ত ও চিরস্থায়ী জীবন।
আখিরাত বা পরকালের দুটি পর্যায় রয়েছে। যথা -

ক. বারযাখ 
খ. কিয়ামত ।

বারযাখ

দুটি বস্তুর মধ্যবর্তী পর্যায়কে বারযাখ বলে। মানুষের মৃত্যু থেকে কিয়ামত বা পুনরুত্থান পর্যন্ত সময়কে বারযাখ বলে। এটি কিয়ামত ও দুনিয়ার জীবনের মধ্যবর্তী পর্দা স্বরূপ। মানুষের মৃত্যুর পর এ জীবনের
শুরু হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন- 

অর্থ : “আর তাদের সামনে রয়েছে বারযাখ যা পুনরুত্থান পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে।” (সূরা আল-মু'মিনুন, আয়াত ১০০) ৪ বারযাখ হলাে কবরের জীবন। এটি আখিরাতের সর্বপ্রথম পর্যায় । বারযাখ জীবনে মানুষ দুনিয়ার ভালাে
আমলের কারণে শাস্তি ভােগ করবে আর খারাপ আমলের জন্য শাস্তি ভােগ করবে। 



কিয়ামত
কিয়ামত অর্থ দণ্ডায়মান হওয়া, উঠা। ইসলামি পরিভাষায় কবর থেকে মানুষ উঠে সেদিন আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হবে, তাই একে বলা হয় কিয়ামত । কিয়ামতে মানুষকে পুনরায় জীবিত করা হবে। এরপর নেককারদের জান্নাতে এবং পাপীদের জাহান্নামে প্রবেশ করানাে হবে ।

গুরুত্ব

আখিরাত আকাইদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আখিরাতের প্রতি ইমান আনা অপরিহার্য। আখিরাতে বিশ্বাস না করলে মানুষ ইমানদার হতে পারে না। মুমিনদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

অর্থ : “আর তাঁরা (মুত্তাকিগণ) আখিরাতের প্রতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ৪)
আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে সৎকর্মশীল করে তােলে। এর ফলে মানুষ উত্তম চরিত্র ও নৈতিকতার গুণাবলি অনুশীলন করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-


অর্থ : “আর যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তাদের অন্তর সত্যবিমুখ এবং তারা অহংকারী।” (সূরা আন-নাহল, আয়াত ২২)

আখিরাতে বিশ্বাস না করলে মানুষ দুনিয়াকেই সবকিছু মনে করে। ফলে যেকোনাে উপায়ে দুনিয়ার স্বার্থ হাসিল করতে চায়। অন্যায়, অত্যাচার, অনৈতিক কার্যকলাপ সবকিছুই তার দ্বারা সংঘটিত হয়। যেকোনাে পাপ করতে সে দ্বিধাবােধ করে না। আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে এরূপ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং পবিত্র করে তােলে।

সুতরাং আমরা আখিরাতে বিশ্বাস করব এবং নৈতিক ও পূত-পবিত্র জীবনযাপন করব।

কাজ : এই পাঠ শেষে আখিরাত সম্পর্কে শিক্ষার্থী যা শিখল তা লিখে শিক্ষককে দেখাবে।



পাঠ ৭
শাফাআত (*)

শাফাআত শব্দের অর্থ সুপারিশ করা, অনুরােধ করা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় কল্যাণ ও ক্ষমার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট নবি-রাসুলগণের সুপারিশ করাকে শাফাআত বলে । কিয়ামতের দিন শাফাআত ? সাধারণত দুটি কারণে করা হবে।যথা-


 ক. পাপীদের ক্ষমা ও পাপ মার্জনার জন্য।
 খ. পুণ্যবানদের মর্যাদা বৃদ্ধি ও কল্যাণ লাভের জন্য ।



 তাৎপর্য
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা মানুষের সব কাজকর্মের হিসাব নেবেন। তারপর আমল অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারণ করবেন। এ সময় পুণ্যবানগণ জান্নাত লাভ ও পাপীরা জাহান্নাম ভােগ করবে। নবি-রাসুল ও পুণ্যবান বান্দাগণ এ সময় আল্লাহর দরবারে শাফাআত করবেন। ফলে অনেক পাপীকে মাফ করা হবে। এরপর তাদেরকে জাহান্নাম থেকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে ।
 আবার অনেক পুণ্যবানের জন্যও এদিন শাফাআত করা হবে। ফলে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে।

শাফাআত সাধারণত দুই প্রকার। যথা-

ক. শাফাআতে কুবরা 

খ. শাফাআতে সুগরা


শাফাআতে কুবরা
কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে এক বিশাল ময়দানে সমবেত কবা হবে। সেদিন সূর্য খুব নিকটবর্তী হবে। মানুষ অসহনীয় দুঃখ-কষ্টে নিপতিত থাকবে। এ সময় তারা হযরত আদম (আ.), হযরত নূহ (আ.), হযরত ইবরাহিম (আ.), হযরত মুসা (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে হিসাবনিকাশ শুরু করার জন্য আল্লাহর নিকট শাফাআত করতে অনুরােধ করবে। তারা সকলেই অপারগতা প্রকাশ করবেন। এ সময় সকল মানুষ মহানবি (স.)-এর নিকট উপস্থিত হবে। তখন মহানবি (স.) আল্লাহ তায়ালার নিকট সুপারিশ করবেন। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা হিসাব-নিকাশ শুরু করবেন। এ শাফাআতকে বলা হয় শাফাআতে কুবরা। একে শাফাআতে উযমাও (সর্বশ্রেষ্ঠ শাফাআত) বলা হয় । এরূপ শাফাআতের অধিকার একমাত্র মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর থাকবে। এ ছাড়া নবি করিম (স.)- জান্নাতিগণকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট সুপারিশ করবেন । এর পরই কেবল জান্নাতিগণ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে ।

শাফাআতে সুগরা
কিয়ামতের দিন পাপীদের ক্ষমা ও পুণ্যবানদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শাফাআত করা হবে। এটাই হলাে শাফাআতে সুগরা। নবি-রাসুল, ফেরেশতা, শহিদ, আলিম, হাফিজ এ শাফাআতের সুযােগ পাবেন। আল কুরআন ও সিয়াম (রােযা) কিয়ামতের দিন শাফাআত করবে বলেও হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।



নিমােক্ত বিষয়ে শাফাআতে সুগরা করা হবে।

 ১. যেসব মুমিন পাপের কারণে জাহান্নামের উপযুক্ত হবে তাদের মাফ করে জান্নাতে দেয়ার
     জন্য শাফাআত ।
 ২. যেসব মুমিন পাপের কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করবে তাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি
     দেওয়ার জন্য শাফাআত।
 ৩. জান্নাতিগণের মর্যাদা বৃদ্ধি করার জন্য শাফাআত।

 আমরা শাফাআতে বিশ্বাস স্থাপন করব । আল্লাহকে ভালােবাসব, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর আদর্শ অনুযায়ী 
 চলব। ফলে পরকালে প্রিয়নবি (স.)-এর শাফায়াত লাভ করে জান্নাতে যাব।

 কিয়ামতের দিন নবি-রাসুল ও নেক বান্দাগণ আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবেন। আল্লাহ তায়ালা এসব শাফাআত   কবুল করবেন এবং বহু মানুষকে জান্নাত দান করবেন। তবে শাফাআতের সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা থাকবে আমাদের   প্রিয়নবি (স.)-এর অধিকারে । তিনি নিজেই বলেছেন-

অর্থ : “আমাকে শাফাআত (করার অধিকার) দেওয়া হয়েছে।” (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

অন্য একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- পৃথিবীতে কত ইট ও পাথর আছে, আমি তার চেয়েও বেশি লােকের জন্য কিয়ামতের দিন শাফাআত করব । (মুসনাদ আহমদ)।

শাফাআত একটি বিরাট নিয়ামত । মহানবি (স.)-এর শাফাআত ব্যতীত কিয়ামতের দিন সফলতা, কল্যাণ ও জান্নাত লাভ করা সম্ভব হবে না। সুতরাং আমরা প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর শাফাআতে বিশ্বাস করব। তাঁকে ভালােবাসব ও পূর্ণরূপে অনুসরণ করব। তাহলে আমরা তাঁর শাফাআত লাভে সক্ষম হব।



কাজ : শ্রেণির সব শিক্ষার্থী দুই দলে ভাগ হবে। এবার একদল শাফাআতের পরিচয় ও তাৎপর্য বলবে 
এবং অন্যদল প্রকারভেদ বর্ণনা করবে ।


পাঠ ৮ 
জান্নাত (*)

জান্নাত শব্দের অর্থ বাগান, উদ্যান, আবৃত স্থান। ফারসি ভাষায় একে বলা হয় বেহেশত । বাংলায় একে 
বলা হয় স্বর্গ। ইসলামি পরিভাষায় আখিরাতে ইমানদার ও নেককার বান্দাদের জন্য যে চিরশান্তির আবাসস্থল 
 তৈরি করে রাখা হয়েছে তাকে জান্নাত বলা হয়।


 জান্নাত হলাে চিরশান্তির স্থান। সেখানে সবকিছুই সুন্দর ও আকর্ষণীয় বস্তু দ্বারা সুসজ্জিত । জান্নাতের
 ঘর-বাড়ি, আসন, আসবাবপত্রসহ সবকিছু স্বর্ণ-রৌপ্য, মণি-মুক্তা দ্বারা নির্মিত । জান্নাতে থাকবে রেশমের 
 গালিচা, দুধ ও মধুর নহর। মিষ্টিপানির স্রোতধারা। বস্তুত আনন্দ উপভােগের সব রকমের জিনিসই
 জান্নাতে বিদ্যমান থাকবে । আল্লাহ তায়ালা বলেন-


অর্থ : “সেখানে (জান্নাতে) তােমাদের মন যা চাইবে তা-ই তােমাদের জন্য রয়েছে আর তােমরা যা দাবি করবে তাও তােমাদের দেওয়া হবে।” (সূরা হা-মীম আস্ সাজদাহ, আয়াত ৩১)

 জান্নাতের বিবরণ দিয়ে রাসুল (স.) বলেন- “আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, আমি আমার পুণ্যবান
 বান্দাদের জন্য জান্নাতে এমন সব বস্তু তৈরি করে রেখেছি যা কোনাে চোখ কোনােদিন দেখে নি, কোনাে
 কান কোনােদিন শােনে নি, আর মানুষের অন্তরও যা কোনােদিন কল্পনা করতে পারে নি।” (মিশকাত)



জান্নাতের নাম

জান্নাত মােট আটটি। এগুলাে হলাে-

 ১. জান্নাতুল ফিরদাউস                                      ৫. দারুন নাইম 
                                    
 ২. জান্নাতুল মাওয়া                                           ৬. দারুল খুলদ 
                                       
 ৩.দারুল মাকাম                                              ৭. দারুস সালাম।
                                                            
  ৪. দারুল কারার                                             ৮, জান্নাতু আদন।

                                                        
এ আটটি জান্নাতের মধ্যে জান্নাতুল ফিরদাউস হলাে সর্বশ্রেষ্ঠ।


জান্নাত লাভের আমল ও উপায়
জান্নাত হলাে মুমিনদের ও পুণ্যবানদের বাসস্থান। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

 অর্থ : “(হে নবি!) যারা ইমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে আপনি তাদেরকে সুসংবাদ দিন যে, তাদের জন্যই
 রয়েছে জান্নাত। যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৫)

 সুতরাং জান্নাত লাভের জন্য দুনিয়াতে সর্বপ্রথম ইমান আনতে হবে। আকাইদের সব বিষয়ের উপর দৃঢ়ভাবে 
 বিশ্বাস করতে হবে । অতঃপর নেক কাজ করতে হবে। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায সুন্দরভাবে আদায়
 করতে হবে।



মহানবি (সা.) বলেছেন-

অর্থ : সালাত হলাে জান্নাতের চাবি ।

 নামাযের পাশাপাশি রমযানের রােযা পালন, যাকাত আদায় ও হজ করতে হবে। তাছাড়া অন্যান্য 
 সৎকাজ, উত্তম চরিত্র ও নৈতিকতার অনুশীলন করতে হবে। জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা 
 ও তাঁর রাসুলের আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে হবে। সকল প্রকার অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে
 বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-


 অর্থ : “আর যে ব্যক্তি তার রবের সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করবে এবং নিজকে কুপ্রবৃত্তি থেকে বিরত
 রাখবে, নিঃসন্দেহে জান্নাতই হবে তার আবাসস্থল।” (সূরা আন-নাযিআত, আয়াত ৪০-৪১)

 সুতরাং আমরা সব সময় নেক আমল করব। কোনাে অবস্থাতেই আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ অমান্য
 করব না। তাহলেই আমরা আখিরাতে জান্নাত লাভ করতে পারব।



কাজ : শিক্ষার্থীরা-
                 ক. জান্নাতের নামগুলাের একটি তালিকা তৈরি করে শিক্ষককে দেখাবে।

                 খ. জান্নাত লাভের উপায় সম্পর্কে ৫টি বাক্য খাতায় লিখে শিক্ষককে দেখাবে।


পাঠ ৯
 জাহান্নাম (*)

 জাহান্নাম হলাে আগুনের গর্ত, শাস্তির স্থান। একে দোযখ বা নরকও বলা হয়। ইসলামি পরিভাষায় 
 আখিরাতে কাফির, মুশরিক, মুনাফিক ও পাপীদের শাস্তির জন্য যে স্থান নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে
 তাকে জাহান্নাম বলা হয় ।

 জাহান্নাম খুবই ভয়ংকর স্থান। সেখানে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। সেখানে পাপীরা আগুনে দগ্ধ হবে।
 বড় বড় সাপ, বিচ্ছু, কীটপতঙ্গ মানুষকে দংশন করবে। জাহান্নামের আগুন হবে আমাদের দুনিয়ার
 আগুন থেকে সত্তর গুণ বেশি উত্তপ্ত । জাহান্নামিদের খাদ্য হবে যাকুম নামক বড় বড় কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ।
 যা তারা খেতে পারবে না, বরং গলায় আটকে যাবে। তাদের পানীয় হবে দোযখিদের উত্তপ্ত রক্ত ও
 পুঁজ। সেখানে মানুষের কোনাে মৃত্যু হবে না, বরং শাস্তি পেতে থাকবে এবং চিরকাল ধরে কষ্ট 
 ভােগ করতে থাকবে।



 জাহান্নামের বিবরণ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

 অর্থ : “যারা আমার আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করবে অচিরেই আমি তাদেরকে (জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ
 করাব। সেখানে যখনই তাদের চামড়া জ্বলে যাবে তখনই এর স্থলে নতুন চামড়া সৃষ্টি করব, যাতে তারা
 শাস্তি ভােগ করতে পারে।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত ৫৬) 
 অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

 অর্থ : “যারা কুফুরি করে তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে আগুনের পােশাক। তাদের মাথায় ঢেলে
 দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি। এর দ্বারা তাদের পেটে যা আছে তা এবং তাদের চামড়া বিগলিত করা
 হবে। আর তাদের জন্য থাকবে লােহার মুগুর। যখনই তারা যন্ত্রণায় কাতর হয়ে জাহান্নাম থেকে
 বের হতে চাইবে তখনই তাদের পুনরায় তাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আর তাদের বলা হবে- স্বাদ 
 গ্রহণ কর দহন-যন্ত্রণার।” (সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত ১৯-২২)

 জাহান্নামের নাম

জাহান্নাম মােট সাতটি। এগুলাে হলাে-

১. জাহান্নাম    ২. হাবিয়া     ৩, জাহিম     ৪. সাকার    ৫. সাইর   ৬. হুতামাহ   ৭. লাযা।

জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের উপায় 

 আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুলের প্রতি যারা ইমান আনে না তারাই জাহান্নামের অধিবাসী। তাছাড়া যেসব
 লােক দুনিয়ায় অন্যায় ও পাপ কাজ করবে তারাও জাহান্নামের শাস্তি ভােগ করবে । অশ্লীল ও অনৈতিক
 কাজ করলেও জাহান্নামের শাস্তি ভােগ করতে হবে। সুতরাং আমরা এসব কাজ থেকে বিরত থাকব।
 আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশিত পথে জীবনযাপন করব। তাহলে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে রেহাই পাব।



কাজ : শিক্ষার্থীরা-
               ক. জাহান্নামের নামগুলাের একটি তালিকা তৈরি করে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে । 

               খ. জাহান্নামের পরিচয় এবং জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে ১০টি বাক্য লিখে শ্রেণিতে
                    উপস্থাপন করবে।


পাঠ ১০
 ইমান ও নৈতিকতা

ইমান হলাে বিশ্বাস। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলােতে বিশ্বাস স্থাপন করাকে ইমান বলা হয়। যে ব্যক্তি
ইমান আনে তাকে বলা হয় মুমিন। আর নৈতিকতা হলাে নীতিসম্বন্ধীয়, নীতিমূলক কাজে-কর্মে, কথাবার্তায় 
নীতি ও আদর্শের অনুসরণই হলাে নৈতিকতা ।

ইমান ও নৈতিকতার সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। নৈতিকতার অনুসরণ করা মুমিন ব্যক্তির অপরিহার্য দায়িত্ব।
নীতি- নৈতিকতা না মানলে কোনাে ব্যক্তি পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারে না। সততা, ন্যায়পরায়ণতা, দয়া, 
ক্ষমা, পরস্পর সহযােগিতা, সাম্য-মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব ইত্যাদি সৎগুণ ইমানদার ব্যক্তির থাকা প্রয়ােজন। 
এগুলাে নৈতিকতার প্রধান দিকসমূহের অন্যতম। মুমিন ব্যক্তি এসব গুণ চর্চা করে থাকেন। অন্যায়-
অত্যাচার, জুলুম-নির্যাতন, মিথ্যাচার, প্রতারণা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ইত্যাদি অনৈতিক কাজ থেকে
মুমিন ব্যক্তি দূরে থাকেন । ইমানের শিক্ষা মুমিনকে এসব কাজ থেকে হেফাজত করে। একটি হাদিসে 
বর্ণিত হয়েছে-
মানুষ যখন ব্যভিচার করে তখন সে মুমিন থাকে না। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম) 
অতএব বােঝা গেল, মুমিন ব্যক্তি কোনােরূপ অনৈতিক কাজ করতে পারে না। 



ইমানের মূলকথা হলাে- (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ)

 অর্থ : “আল্লাহ ব্যতীত কোনাে মাবুদ নেই । মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর রাসুল।” 
 এ কালিমার সারকথা হলাে ইবাদত ও প্রশংসার যােগ্য একমাত্র আল্লাহ। আর আল্লাহ তায়ালা ও রাসুল
 (স.)- এর দেখানাে পথ ও আদর্শই হলাে প্রকৃত মুক্তি ও সফলতার পথ । দুনিয়ার সর্বাবস্থায় সকল কাজে এ
 কালিমা মনে রাখতে হবে। এ কালিমার শিক্ষা নিয়ে আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করতে হবে। মুমিন 
 ব্যক্তি সর্বদা এরূপই করে থাকেন।

 আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুলের আদর্শই হলাে নৈতিকতার আদর্শ। আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা নীতি 
ও আদর্শ অনুসরণের জন্য বহু নির্দেশ প্রদান করেছেন। আর রাসুল (স.) নিজে ছিলেন উত্তম আদর্শের
 বাস্তব নমুনা। তিনি হাতে-কলমে মানুষকে নৈতিকতা ও উত্তম চরিত্রের শিক্ষা দিয়েছেন। মুমিন ব্যক্তি
 জীবনযাপনের ক্ষেত্রে ইমানের এ শিক্ষা বাস্তবায়ন করে থাকেন।

সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, ইমান ও নৈতিকতা খুবই গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। ইমান মানুষকে নীতি নৈতিকতার 
পথ দেখায়। ইমান অনৈতিক ও অশ্লীল কার্যাবলি থেকে মানুষকে বিরত রাখে । আমাদেরও উচিত ইমানের 
 শিক্ষা গ্রহণ করা। অতঃপর নিজ জীবনে তার বাস্তবায়ন করা। তাহলে আমরা নৈতিকতার অনুসারী হয়ে

সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে পারব। ফলে আমাদের দুনিয়ার জীবন সুন্দর ও কল্যাণময় হবে । আর 
পরকালীন জীবনে আমরা লাভ করব মুক্তি, সফলতা ও চিরশান্তির জান্নাত।



কাজ : শ্রেণির সব শিক্ষার্থী দু'দলে ভাগ হয়ে যাবে। এবার প্রত্যেক দল থেকে তিনজন বক্তা নির্বাচন
 করবে। “প্রকৃত ইমানই কেবল মানুষকে নীতি-নৈতিকতার পথে পরিচালিত করে” বিষয়ের পক্ষে একদল 
 এবং বিপক্ষে একদল অবস্থান নিয়ে বিতর্ক করবে । শ্রেণিশিক্ষক সঞ্চালক হিসেবে থাকবেন।

 বিতর্ক শেষে বিজয়ী দলকে এবং উভয় দলের মধ্যে যে বক্তা বিতর্কে যুক্তিপূর্ণ ভালাে বক্তব্য উপস্থাপন
 করতে সক্ষম হয়েছে, তাকে সবাই মিলে ধন্যবাদ জানাবে । সম্ভব হলে পুরস্কারের ব্যবস্থা করবে ।



অনুশীলনী

শূন্যস্থান পূরণ কর

  ১. ইসলামের মূল বিষয়গুলাের প্রতি বিশ্বাসকেই | 

 ২. ইমানের_ দিক রয়েছে।

৩. আসমানি কিতাব সর্বমােট —খানা ।

 ৪. আল্লাহু মুহাইমিনুন অর্থ —।

 ৫. শাফাআত সাধারণত প্রকার।

বাম পাশ থেকে শব্দ বা বাক্যাংশ নিয়ে ডান পাশের সাথে মিল কর
 বাম পাশ
 ডান পাশ
১. শাফাআত একটি 
2,ইমান আল্লাহর একটি
৩. মুনাফিকরা নিশ্চয়ই
৪. আল্লাহ তায়ালার ক্ষমা
৫. মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে বলে
পরকাল 
বড় নিয়ামত
বিরাট নিয়ামত
 অপরিসীম
মিথ্যাবাদী 

সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
      ১. আসমানি কিতাবসমূহে বিশ্বাসের প্রয়ােজন কেন?
      ২. নিফাক বলতে কী বােঝায়?
      ৩. শাফাআত বলতে কী বােঝায়?

বর্ণনামূলক প্রশ্ন
 ১. ইমানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
 ২. রিসালাতের প্রয়ােজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
 ৩. নৈতিক চরিত্র গঠনে ইমানের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।

 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন 
১. ইমানের মৌলিক বিষয় কয়টি?
 ক. তিনটি                                     খ. পাঁচটি 
 গ, সাতটি                                     ঘ. আটটি

 ২. নিফাকের ফলে সমাজে সৃষ্টি হয়
 i. অশান্তি
 ii. ঝগড়া বিবাদ
 iii. মতৈক্য 

নিচের কোনটি সঠিক?
 ক. i ও ii                        খ. i ও iii 
 গ. ii ও iii                      ঘ. i, ii ও iii

 নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও :
 সানিয়াত একটি অফিসে চাকুরি করেন। তিনি সঠিক সময়ে অফিসে আসেন এবং তার উপর অর্পিত সকল
 দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন। তিনি কোনাে অন্যায় ও অনৈতিক কাজ করেন না। তিনি দুনিয়াকে
 সবকিছু বলে মনে করেন না।

৩. সানিয়াতের কর্মকাণ্ডের পিছনে কোন বিশ্বাসটি কাজ করেছে?
 ক. তাকদির                      খ. আখিরাত 
 গ. রিসালাত                      ঘ. শাফাআত

৪. সানিয়াতের কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ প্রাপ্য হবে
 i. প্রশংসা।          
 ii. জান্নাত
 iii. নবির শাফাআত

নিচের কোনটি সঠিক? 
ক. i ও ii                    খ. i ও iii
গ. ii ও iii                  ঘ. i, ii ও iii



সৃজনশীল প্রশ্ন

১। জায়েদ ও নয়ন সহপাঠী। জায়েদ আল্লাহ, রাসুল, ফেরেশতা, আখিরাত, তাকদির, পুনরুত্থান ইত্যাদি
     বিষয়কে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে এবং মুখে স্বীকার করে। সে তার বিশ্বাস অনুসারে আমল করতে 
     যথাসম্ভব চেষ্টা করে। অন্যদিকে নয়ন জায়েদের সাথে থাকাকালীন সালাত আদায় করে; ইমানদারসুলভ
     আচরণ করে। কিন্তু তার ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বন্ধুদের সাথে থাকাকালীন তাদেরকে বলে, আমি তােদের 
     ধর্মকেই বিশ্বাস করি। জায়েদের সাথে সালাত আদায় করি ওকে খুশি করার জন্য। তবে সে এটাও 
     ভাবে যে, এজন্য তার কঠোর শাস্তি হতে পারে।



ক. তাকদির অর্থ কী?
 খ. ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস বলতে কী বুঝায়? ব্যাখ্যা কর। 
 গ. জায়েদের কর্মকাণ্ডকে কী হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়? ব্যাখ্যা কর।
 ঘ. “নয়নের কর্মকাণ্ডের পরিণতি নিশ্চয়ই খারাপ”- বক্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।

২. সুমাইয়া ও সামিয়া দুই বান্ধবী । সােনারগাঁয়ে বেড়াতে যাবে বলে দুজনেই দিন-তারিখ ঠিক করে ।
    সুমাইয়া নির্দিষ্ট তারিখে প্রস্তুতি নিয়ে সামিয়ার অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু সামিয়া তার বাবার কাছ থেকে 
    টিফিন, কাগজ ও কলমের অজুহাত দিয়ে বেশ কিছু টাকা নিয়ে আদিবার সাথে মার্কেটে ঘুরতে চলে যায়। 
    পরদিন সামিয়ার সাথে সুমাইয়ার দেখা হয়। সুমাইয়া বিষয়টি উত্থাপন করলে উভয়ের মধে কথা
    কাটাকাটি হয় এবং উভয়ই মনঃক্ষুন্ন হয়।

 ক, মুনাফিকের চিহ্ন কয়টি?
 খ. তাকদিরে বিশ্বাস বলতে কী বােঝায়? 
 গ. সামিয়ার আচরণে কী প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
 ঘ. সুমাইয়ার কার্যক্রমের ফলাফল পাঠ্যপুস্তকের আলােকে ব্যাখ্যা কর ।


  • 3Blogger Comment
  • Facebook Comment

3 Comments